গাজীপুরে চারটি বাগানবাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে, যেগুলো শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার পরিবারের মালিকানায় ছিল। বিগত সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন এসব বাগানবাড়ি কেনা হয়েছিল অবসর সময় কাটানোর জন্য। তবে সরকার পতনের পর, এসব বাড়িতে বিক্ষুব্ধ মানুষেরা হামলা চালিয়ে আগুন দেয় এবং লুটপাট করে। বর্তমানে সেগুলো আগের মতো আর জৌলুস ধরে রাখতে পারেনি।
বাগানবাড়ির ব্যবহার ও উপস্থিতি
বিভিন্ন সময় শেখ পরিবারের সদস্যরা এসব বাগানবাড়িতে যেতেন। শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, তাদের সন্তান ববি ও টিউলিপের মতো সদস্যদের উপস্থিতি ছিল সাধারণ ঘটনা। এসব বাগানবাড়িতে বিচার-সালিশের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও অনুষ্ঠিত হতো। তাদের আগমনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলত। তবে স্থানীয়রা এসব বাড়িতে প্রবেশের সুযোগ কখনোই পায়নি।
বাগানবাড়িগুলোর বিবরণ
১. টিউলিপ টেরিটরি
গাজীপুর শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে কানাইয়া এলাকায় ৩৫ বিঘা জমির ওপর অবস্থিত ‘টিউলিপ টেরিটরি’। সবুজে ঘেরা এই বাগানবাড়িতে রয়েছে একটি নান্দনিক ডুপ্লেক্স বাড়ি, সান বাঁধানো পুকুর ঘাট, এবং প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম জলাশয়।
ম্যানেজার আব্দুর রহমান জানান, শীতের সময় টিউলিপ আপা ও ববি ভাই এখানে আসতেন। তাদের আগমনের সময় কঠোর নিরাপত্তা বজায় রাখা হতো।
২. বাগান বিলাস
বাঙ্গালগাছ এলাকায় ২৫ বিঘা জমির ওপর নির্মিত ‘বাগান বিলাস’ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এখানে রয়েছে তিন রুমের দোচালা ঘর, ছোট একটি ঘর, বিশাল পুকুর, এবং ওয়াচ টাওয়ার।
এটি শেখ রেহানার দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের মালিকানায় ছিল বলে দাবি করা হয়। তবে শেখ রেহানার পরিবার এই বাগানবাড়িতে নিয়মিত আসতেন বলে এলাকাবাসীর দাবি।
৩. ফাওকালের বাগানবাড়ি
গাজীপুর মহানগরীর ফাওকাল এলাকায় ২৩ বিঘা জমির ওপর অবস্থিত এই বাগানবাড়ি আগে ‘ডাক্তার বাড়ি’ নামে পরিচিত ছিল। ২০১৫ সালে শেখ রেহানার দেবর তারিক সিদ্দিক ১৪ বিঘা জমি কিনে এখানে একটি দৃষ্টিনন্দন বাংলো নির্মাণ করেন। জমির মালিকানা নিয়ে কিছু বিরোধ থাকায় ৮ বিঘার দাম দেওয়া হয়নি।
৪. তেলিরচালা বাগানবাড়ি
মৌচাকের তেলিরচালা এলাকায় ১৫ বিঘার ওপর নির্মিত এই বাগানবাড়ি অবকাশ যাপনের জন্য ব্যবহার হতো। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রায়ই এখানে সময় কাটাতেন। ২০২4 সালের এপ্রিলেও তারা এখানে আসেন। বাগানবাড়িটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধির তত্ত্বাবধানে ছিল।
বর্তমান অবস্থা
সরকার পরিবর্তনের পর বিক্ষুব্ধ মানুষেরা এসব বাগানবাড়িতে হামলা চালায়, ভাঙচুর করে এবং লুটপাট করে। এখন আর আগের জৌলুস নেই। স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে সঠিক তদন্তের অপেক্ষায় রয়েছে।
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ কায়সার খসরু বলেন, “গাজীপুরে শেখ রেহানার পরিবারের বিভিন্ন জমি ও বাংলো রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। দুদকের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পেলে আমরা তথ্য-প্রমাণসহ প্রতিবেদন পাঠাবো।”