শনিবার , ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ১০ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. MOVIETORRENTS
  2. অর্থনীতি
  3. আইটি বিশ্ব
  4. আজকের পত্রিকা
  5. আন্তর্জাতিক
  6. ইসলাম ও জীবন
  7. একদিন প্রতিদিন
  8. কোভিড-১৯
  9. খেলা
  10. চাকরি
  11. চিত্র বিচিত্র
  12. জনপ্রিয় সংবাদ
  13. জাতীয়
  14. ডাক্তার আছেন
  15. দরকারি

সেন্টমার্টিন ভ্রমণে বিধিনিষেধ: দূষণ রোধ নাকি অন্যকিছু?

প্রতিবেদক
স্টাফ রিপোর্টার
ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৫ ১:৩৯ পূর্বাহ্ণ
ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত কয়েক মাস ধরে পর্যটকদের যাতায়াত সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্তের আওতায় নভেম্বর মাসে শুধুমাত্র দিনের বেলায় পর্যটকরা দ্বীপ ভ্রমণের অনুমতি পান। আর ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে রাতে থাকার সীমিত সুযোগ দেওয়া হয়—প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক। তবে জানুয়ারির শেষে (৩১ জানুয়ারি) রাতযাপনের এই সুযোগ শেষ হচ্ছে, এবং পরবর্তী নয় মাসের জন্য সেন্টমার্টিন ভ্রমণ নিষিদ্ধ থাকবে।

সরকারের উদ্দেশ্য ও বাস্তবতা

সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রধান লক্ষ্য ছিল সেন্টমার্টিনের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা এবং প্লাস্টিক দূষণ কমানো। পর্যটকদের জন্য বেশ কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছিল। যেমন:
• দ্বীপে আলোকসজ্জা ও বারবিকিউ পার্টি নিষিদ্ধ।
• প্রবাল এবং সামুদ্রিক প্রাণী সংগ্রহে কড়াকড়ি।
• পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বহন নিষিদ্ধ।
• পর্যটকদের ট্রাভেল পাস বাধ্যতামূলক।

পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছিলেন, “আমরা দ্বীপটি বাঁচাতে চাই। এটি সবার সম্পদ। পর্যটকরা যদি দায়িত্বশীল আচরণ করে, তাহলে পরিবেশ রক্ষা সম্ভব।”

বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ

তবে বাস্তবে এই নিয়মগুলো ঠিকমতো কার্যকর হয়নি।
ঢাকা থেকে সপরিবারে ঘুরতে যাওয়া পর্যটক জাকিয়া আহমেদ অভিযোগ করেন, দ্বীপে পর্যাপ্ত ডাস্টবিনের অভাবের কারণে প্লাস্টিকের বোতল এবং আবর্জনা সৈকতে ভাসতে দেখা গেছে। অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ছেঁড়াদ্বীপে পর্যটকরা কোস্টগার্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে ভোরে যাতায়াত করছেন।

ট্যুর অপারেটর জান্নাতুল ফেরদৌসী জানান, শিপে অতিরিক্ত ভিড় এবং স্ট্যান্ডিং টিকিট নিয়ে ভ্রমণের ফলে পরিবেশ দূষণ ও বিশৃঙ্খলা বেড়েছে। এছাড়া, নিষেধাজ্ঞার পরও রিসোর্টগুলোতে বারবিকিউ পার্টি চলছে।

ইতিবাচক পরিবর্তন ও সীমাবদ্ধতা

আইইউসিএন বাংলাদেশের মুখ্য গবেষক সীমান্ত দীপু জানান, পর্যটক সংখ্যা কমায় কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। কচ্ছপ এবং প্রবালের প্রজনন ভালো হয়েছে, এবং অতিথি পাখির সংখ্যাও বেড়েছে। তবে প্লাস্টিক দূষণ কমাতে আরও কার্যকর তত্ত্বাবধান প্রয়োজন।

স্থানীয় রিসোর্ট মালিক আব্দুল্লাহিল মামুন নিলয়ের মতে, সরকার যদি রিসোর্টগুলোকে আবর্জনা অপসারণে বাধ্য করত, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভালো হতে পারত।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একে আহসান উদ্দীন বলেন, “পর্যটকরা যেখানে-সেখানে প্লাস্টিক ফেলছে। তাদের ফেলে যাওয়া প্লাস্টিক পরিষ্কার করাই এখন আমাদের পরবর্তী কাজ।”

স্থানীয়দের দাবি

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের জীবিকা দ্বীপের পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. মুজিবুর রহমান বলেন, “জানুয়ারিতে দ্বীপ বন্ধ করে দিলে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হবে। তবে সঠিক তত্ত্বাবধায়ন করা হলে দুই মাস বা চার মাস খোলা রাখার মধ্যে তেমন পার্থক্য হবে না।”

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

পরিবেশবিদদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে এই নিয়মের সুফল পেতে হলে আরও কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে। তবে পর্যটকদের সচেতনতা ও সরকারের কার্যকর মনিটরিং নিশ্চিত করতে পারলে সেন্টমার্টিন তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে সক্ষম হবে।

সেন্টমার্টিনের মতো একটি প্রাকৃতিক সম্পদকে বাঁচাতে সরকার ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা কতটা কার্যকর হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

সর্বশেষ - রাজনীতি